প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির পেছনে ছুটে মানবিকতা হারিয়ে ফেলছি নাতো?- মো. এনামুল হাসান কাওছার |
দৈনিক আজকালের
খবর- ১৮ জুন, ২০১৯, মঙ্গলবার সংখ্যার চতুর্থ পৃষ্ঠা 'সম্পাদকীয় ও মতামত' অংশে প্রকাশিত
-প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির পেছনে ছুটে মানবিকতা হারিয়ে ফেলছি নাতো?
- মো. এনামুল হাসান কাওছার
-
বর্তমান সমাজে তথ্যপ্রযুক্তির ত্বরিত উন্নয়নে ক্রমান্বয়ে আমরা বিশ্বের আনাচেকানাচের তথ্য ছোট্ট স্মার্টফোন কিংবা ল্যাপটপের পর্দায় পেয়ে যাচ্ছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ক্রমে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। প্রভাতে ঘুম ভাঙার পর কিংবা গভীর রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সর্বশেষ আপডেট না জানলে যেন দিনের শুরুটাই সুন্দরভাবে হয় না কিংবা রাতের ঘুমে পরিতৃপ্তি পাওয়া যায়না।
-
বর্তমান সমাজে তথ্যপ্রযুক্তির ত্বরিত উন্নয়নে ক্রমান্বয়ে আমরা বিশ্বের আনাচেকানাচের তথ্য ছোট্ট স্মার্টফোন কিংবা ল্যাপটপের পর্দায় পেয়ে যাচ্ছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ক্রমে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। প্রভাতে ঘুম ভাঙার পর কিংবা গভীর রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সর্বশেষ আপডেট না জানলে যেন দিনের শুরুটাই সুন্দরভাবে হয় না কিংবা রাতের ঘুমে পরিতৃপ্তি পাওয়া যায়না।
এবার আসা যাক
অন্য কথায়, আচ্ছা এখন একজন ফেইসবুক একাউন্ট ব্যবহার করেনা এমন কাউকে দেখলে আপনার
মধ্যে কেমন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজলে
অধিকাংশ মানুষের কাছে মনে হতে পারে উনি আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে চলছেন না।
এই প্রশ্নের
উত্তরের আরেকটি জোরালো জবাব হলো এখন 'সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম' ব্যবহার করেনা এমন কাউকে কি পাওয়া যাবে? হ্যাঁ আমিও
মানছি যে পাওয়াটা খুবই দুষ্কর। এরমানে আমাদের সকলের মধ্যে এটা এতোটাই জরুরি হয়েছে
যে এর ব্যবহার অনস্বীকার্য।
সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যমে একটা পোস্ট-এ আপনি কোন বিষয়গুলো শেয়ার করেন? কিংবা কোন ভিডিও ও ছবিগুলো আপনার
টাইমলাইনে জায়গা করে নেয়? অবশ্যই অধিকাংশ ক্ষেত্রে আপনার
জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহুর্তগুলো আপনি শেয়ার করেন। এখন বলতে পারেন তাহলে আমি কি আমার
জীবনের খারাপ মুহুর্তগুলো শেয়ার করবো?
আমি আপনাকে
খারাপ মুহুর্ত শেয়ার করার জন্য বলছি না। আমি বলছি আপনার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহুর্তের
আড়ালে যতগুলো কষ্ট আর পরিশ্রমের ছাপ ছিলো সেটা এখানে কেউই সুষ্পষ্টভাবে খুঁজে
পাচ্ছে না। কাজেই 'সহজেই সফলতা অর্জন' এই পথের দিশারি হয়ে প্রতিনিয়ত
হাজারো তরুণ হতাশা চিত্তে নিজেকে দোষে যাচ্ছে । সে নিজের ক্ষমতা আর পরিকল্পনা
অনুযায়ী পরিশ্রম ব্যতিরেকে নিজেকে দেখতে চায় সর্বোচ্চ চূড়ায়।
নিজের মধ্যে প্রত্যাশা পুষে, আজই আমি নামীদামি ব্যান্ডের ফোনটি কিনবো, ওর কাছে একটা আপডেটেড মডেলের ল্যাপটপ আছে আমার থাকবেনা কেন? কিন্তু সে ভুলে যায় তার পরিবারের পক্ষে এতো টাকা দিয়ে উচ্চমূল্যে পণ্যটি কেনার সামর্থ্য নেই।
নিজের মধ্যে প্রত্যাশা পুষে, আজই আমি নামীদামি ব্যান্ডের ফোনটি কিনবো, ওর কাছে একটা আপডেটেড মডেলের ল্যাপটপ আছে আমার থাকবেনা কেন? কিন্তু সে ভুলে যায় তার পরিবারের পক্ষে এতো টাকা দিয়ে উচ্চমূল্যে পণ্যটি কেনার সামর্থ্য নেই।
বিশ্বায়নের আবহ
আমাদের আলোড়িত করছে,
ইতিবাচকতার চেয়ে নেতিবাচক দিকগুলো দাগ কেটে যাচ্ছে আমাদের সমাজে। 'সহজে সফলতা অর্জন' এর পথে হাঁটতে গিয়ে নিজের ক্ষমতা
যাচাই তো দূরের কথা ইতিবাচক চিন্তার মানুষিকতাও হারিয়ে বসছি। মানবিকতার বন্ধনে সম্পর্ককে
বিচার না করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উপর অতি নির্ভরশীলতা থামিয়ে দিচ্ছে
অনুভূতির অবাধ প্রকাশ। নিজের প্রাপ্তির বিচারটাও করছি অন্যের দেখে, তার আছে আমার নাই কেন? কিন্তু তার থাকার পেছনের
বাস্তবিক কারণগুলো অনুসন্ধান না করেই নিজের অপ্রাপ্তিকে হতাশায় রূপান্তরিত করে
নিজেকে নিয়ে যাচ্ছি চূড়ান্ত ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। নিজের জীবনের সবচেয়ে প্রিয়
প্রাণটাকে নিজেই বিনাশ করছি। সমাধান হিসেবে আত্মহত্যার পথকে পাথেয় করে নিচ্ছি।
কিন্তু এটা কি কোন সমাধান?
না কখনো এটা কোন
সমধান হতে পারেনা। বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই এগিয়ে যাওয়া বাঞ্চনীয়। আপনার সফলতা
নির্ভর করে আপনার সুপরিকল্পিত পরিশ্রম আর একনিষ্ঠতার উপর। আপনার সফলতার মাপকাঠি
অন্যকারো জয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয় বরং তা কেবল আপনাকে খানিক অনুপ্রেরণা দিতে
পারে কিন্তু তা আপনাকে কখনো পরিচালিত করতে পারে না। বাস্তবতায় বাঁচুন, নিজের সৃজনশীল
সত্ত্বা দ্বারা স্বীয় সামর্থ্যানুযায়ী নিজের জীবনকে সাজান।
-লেখক
মো. এনামুল হাসান কাওছার,
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
মো. এনামুল হাসান কাওছার,
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments:
Post a Comment