প্রশিক্ষনার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে অভিব্যক্তি প্রকাশ | টেলিভিশন নাটক প্রযোজনা কৌশল পাঠ্যধারা


টেলিভিশন নাটক প্রযোজনা কৌশল পাঠ্যধারা | শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে অভিব্যক্তি প্রকাশ-

জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট, তথ্য মন্ত্রণালয় এর আয়োজনে ( ২১ জুলাই থেকে ০৮ আগস্ট ২০১৯ পর্যন্ত) ৩ সপ্তাহব্যাপী টেলিভিশন নাটক প্রযোজনা কৌশল পাঠ্যধারার সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত সম্মানিত সভাপতি, পরিচালকবৃন্দ, বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা- কর্মচারীবৃন্দ, শ্রদ্ধেয় শিক্ষক শিক্ষিকাবৃন্দ ও উপস্থিত সুধীজন- সবাইকে উক্ত পাঠ্যধারায় অংশগ্রহণকারী প্রশিক্ষনার্থীদের পক্ষ থেকে  আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা।


শ্রাবণের আজকের এই ক্ষণে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সোনার তরী কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত 'বন্ধন' কবিতার দুইটি লাইন খুব মনে পড়ছে-
"বন্ধন? বন্ধন বটে, সকলি বন্ধন--
স্নেহ প্রেম সুখতৃষ্ণা;.."

হ্যাঁ তিন সপ্তাহের আপাতদৃষ্ট স্বল্প পরিসরের সুদৃঢ় বন্ধন আজকে ইতি টানবে। প্রকৃতির নিয়মই হলো- বিদায়ের বিষাদ মুহুর্তে মানব হৃদয়কে স্তম্ভিত করে দেয়া, তবে মানব প্রকৃতির ক্রমবর্ধমান যাত্রা আর অগ্রগতি কিন্তু এসব খণ্ডখণ্ড ঘটনার অভিজ্ঞতালব্ধ সম্মিলিত প্রয়াসের সংমিশ্রণে নির্মিত।

প্রশিক্ষনার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে অভিব্যক্তি প্রকাশের গুরু দায়িত্ব যখন আমাদের দুইজনের কাঁধে এসে বর্তায় তখন আমরা দারস্থ হয়েছিলাম অন্যান্য বন্ধুদের অভিব্যক্তি জানতে।
সবার সম্মিলিত অভিব্যক্তির নিরিখে আমি আপনাদের সামনে উল্লেখযোগ্য বিষয়য়াদি উপস্থাপন করছি।

১) কোর্স প্রশাসন এর প্রতি কৃতজ্ঞতা-
প্রথমেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি কোর্স প্রশাসনের প্রতি, আপনাদের নিরলস পরিশ্রমের কারণেই পাঠ্যধারাটি সাফল্যমণ্ডিত ও কার্যকর হয়ে উঠেছে।
আমাদের উক্ত আয়োজনে পাঠ্যধারা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জনাব, সুফী জাকির হোসেন।

পাঠ্যধারা পরিচালক হিসেবে আমাদের মধ্যে ছিলেন  শিউলী দাস ম্যাডাম। এই তিন সপ্তাহব্যাপী প্রতিটি দিন ম্যামের দিকনির্দেশনা আর স্নেহাশিস অভিভাবকসুলভ আচরণ আমাদের মনোমুগ্ধ করেছে।

পাঠ্যধারা সমন্বয়কারী হিসেবে মো: ফাইম সিদ্দিকী স্যার সর্বদা আমাদের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।
'জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে গবেষণা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।' স্যারের এই কথাটি আমাদের সবাইকে প্রণোদিত করেছে।




সম্মানিত সুধি-
২) আমাদের পাঠ্যধারার সাথে সম্পৃক্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

নাট্যকলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৪-২০১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য- অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান, নাট্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যান- ড. কালামউদ্দিন খান ও কোর্স শিক্ষক- জনাব, সঞ্জীব কুমার দে এর প্রতি।

থিয়েটার এন্ড পারফর্মেন্স স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য- অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, চেয়ারম্যান- আহমেদুল কবির ও কোর্স শিক্ষক- জনাব রহমত আলী এর প্রতি।

৩) ৩ সপ্তাহব্যাপী এই পাঠ্যধারায় আমরা বাংলাদেশের গুনী ও স্বনামধন্য প্রশিক্ষকবৃন্দের সান্নিধ্যে আসার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছি।

আমাদের পাঠ্যধারার সাথে প্রশিক্ষক হিসেবে সম্পৃক্ত ছিলেন-জনাব ম. হামীদ, জাহিদ রিপন, বদরুজ্জামান, নাসির মাহমুদ, তানভীর জোহা, পঙ্কজ পালিত, মাসুদ মনোয়ার ভুঁইয়া, শফিকুর রহমান শান্তুনু, জাকিউল হক, (উজ্জ্বল, হাসান, জনি, আরিফ), ইসলাম শফিকসহ প্রমুখ গুনী ও স্ব স্ব ক্ষেত্রে তারকার ন্যায় বিরাজমান প্রশিক্ষকবৃন্দ।

কয়েকটি ক্লাসে আমরা সংশ্লিষ্ট বিষয়কে উপস্থাপনের বিপরীতে কেবল গল্পের আশ্রয়ে এগিয়েছি। সেসব ক্ষেত্রে পরবর্তী কোর্সে আমরা আরেকটু তথ্যবহুল ও ব্যবহারিক ক্লাসের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। কাজেই, জাতীয় গণমাধ্যম ইন্সটিটিউট এর প্রতি আমাদের উদাত্ত আহবান উক্ত বিষয়ে আরেকটু যত্নশীল হলে আমাদের পরবর্তী ব্যাচগুলো আরো বেশি উপকৃত হবো বলে মনেকরি।

৪) স্টাফদের সৌজন্যবোধ

প্রিয় সুধি,
কোর্স স্টাফদের সৌজন্যবোধ আমাদের মুগ্ধ করেছে। সবার পক্ষ থেকে রবিউল ভাই ও ইউসুফ ভাইকে বিশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।






৫) চূড়ান্ত প্রযোজনা নির্মাণের অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষকবৃন্দের সর্বিক সহযোগিতা

রুশ নাট্যতাত্ত্বিক মাইকেল চেখব Inspired Acting (অনুপ্রাণিত অভিনয় পদ্ধতি) এর আলোচনায় On The Technique of Acting গ্রন্থের ২য় অধ্যায়ে Higer Ego এর পর্যালোচনায় ৪টি উপাদানের কথা বলেছিলেন। যথা-
# Creative Individuality- সৃষ্টিশীল স্বাতন্ত্র্য
# Discernment of Good and Evil- ভালোমন্দের বিচার
# Cotemporary Life- সমকালীন জীবন &
# The Objectivity  of Humor- হাস্যরসের বস্তুনিষ্ঠতা

তথা সৃজনশীল শিল্প নির্মাণে সৃষ্টিশীল স্বাতন্ত্র্য, ভালোমন্দের বিচার, সমকালীন জীবন এবং হাস্যরসের বস্তুনিষ্ঠতা এই চারটি উপাদানের চর্চা বাঞ্চনীয়।

আমরা জানি, প্রতিটি শিল্প মাধ্যমের ভাষা ভিন্ন। মঞ্চের প্রকাশরীতিতে আমরা পরিচিত হলেও টেলিভিশন নাটকের সাথে আমাদের পরিচিতি এই পাঠ্যধারার কল্যাণেই হয়েছে।

তত্বীয় বিষয়ে জ্ঞ্যান-অর্জনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ চূড়ান্ত প্রযোজনায় নাট্যচার্য সেলিম-আল-দীন স্মরণে নির্মাণ করেছে  "মধ্যবিত্ত চক্র" যা একজন মধ্যবিত্ত চাকুরীজীবির অব্যক্ত প্রতিবাদের পটভূমিতে নির্মিত।

অন্যদিকে নাট্যকলা বিভাগ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ নাট্যকার আব্দুল্লাহ আল মামুন স্মরণে 'বিপ্রতীপ' শীর্ষক স্বল্প দৈর্ঘের নাটক নির্মান করেছে। যা একজন পথশিশুর সততা ও বিবেকের তাড়নার পটভূমিতে নির্মিত।

চূড়ান্ত প্রযোজনার সাথে সম্পৃক্ত প্রশিক্ষকবৃন্দের দিকনির্দেশনা আমাদের কাজকে অনেক সহজ ও শিক্ষনীয় করেছে এবং নতুন অভিজ্ঞতার সঞ্চার করেছে।

নিকোলাস বলেছিলেন-
"দেখবার জন্য আমাদের চোখের যেমন আলোর প্রয়োজন, ঠিক তেমনি কোন প্রত্যয় অর্জন করবার জন্য আমাদের ভাবনার প্রয়োজন।"

আশাকরি এই পাঠ্যধারায় অর্জিত জ্ঞান বাস্তবিক জীবনে আমাদের ভাবনার নিরিখে কাঙ্ক্ষিত প্রত্যয় অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

পরিশেষে শেষ করতে চাই ক্রিস্টোফার মার্লির একটি উক্তি দিয়ে। তিনি বলেছিলেন-
"নতুন জানার যেমন যন্ত্রণা আছে, তেমনি আনন্দও আছে।"

আমাদের প্রত্যাশা নতুন জানার আনন্দটুকুই থাকবে আমাদের অন্তরে কিন্তু কেটে যাবে যন্ত্রণার দীর্ঘশ্বাস।
সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
--
মো. এনামুল হাসান কাওছার
নাট্যকলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

No comments:

Post a Comment