The brave volunteer beside the affected people in the Chalkbazar tragedy | দৈনিক ইত্তেফাক | প্রজন্ম

দৈনিক ইত্তেফাকের ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সংখ্যার প্রজন্ম পাতার লিড ফিচারে চকবাজার ট্র্যাজেডিতে অগ্নিদগ্ধদের পাশে সাহসী ভলান্টিয়ার শীর্ষক ফিচার

- আহসান জোবায়ের,২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

২০ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টা থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সেবা প্রদানের লক্ষ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ জন রোভারের একটি দল নিয়ে ইনচার্জের দায়িত্ব পালন করছিলেন কাওছার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। রাত ১০টা ১০ মিনিটে নন্দকুমার দত্ত সড়কের চুরিহাট্টা মসজিদ গলির রাজ্জাক ভবনে আগুন লাগে। জবি রোভার-ইন-কাউন্সিলের সাবেক সভাপতি মো. আরিফুল ইসলামের মুঠোফোনের মাধ্যমে কাওছার জানতে পারেন চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কথা। তারপর জবি রোভার থেকে ডিজাস্টার রেসপন্স প্রশিক্ষণগ্রহণকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন, কিন্তু টানা তিন দিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় কাউকে পাচ্ছিলেন না। রাত ১২টা ৫০ মিনিটে ভাগ্যক্রমে পেয়ে যান সিনিয়র রোভার মেট মো. আহসান হাবীবকে। তিনি মালিবাগ থাকেন, এত রাতে কীভাবে সেখানে পৌঁছাবেন সেটা একটা দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কাওছারের মাথায় আসে রাইড শেয়ারিং অ্যাপ্লিকেশনের কথা। যেই কথা সেই কাজ, একজন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে আর অন্যজন মালিবাগ থেকে পৌঁছান চকবাজারে। দুজনই হেলথ মোটিভেটর কোর্স, ফার্স্ট অ্যাইড, ব্লাড ব্যাংক, নার্সিং, ডিজাস্টার রেসপন্স প্রভৃতি স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন; যা তাদের উক্ত কাজে সেবা প্রদানের জন্য ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। আহসান হাবীব পিপিই (প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র) সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন; অন্যদিকে কাওছারে সঙ্গে স্কাউট ইউনিফর্ম, বাঁশি ও স্কার্ফ ছাড়া তেমন কিছু ছিল না।

আহসান হাবীব সদ্য বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একজন কমিউনিটি ভলান্টিয়ার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। ফায়ার সার্ভিস প্রথমে রোভারদের নিরাপত্তার কথা ভেবে অনুমতি প্রদান করেনি। এর একটা মূল কারণ ছিল—অন্যান্য স্বাভাবিক আগুনের চেয়ে এই আগুন ছিল সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী। আর অগ্নিদগ্ধ ভবন ধসের আশঙ্কাও ছিল। যেহেতু দুজনই ভলান্টিয়ার কাজেই তাদের সরাসরি আগুন নেভানোর কাজ করতে নিষেধাজ্ঞা ছিল। ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করাই ছিল তাদের মূল কাজ। উত্সুক জনতার ঢল সামলাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করেন একজন। আহতদের প্রাথমিক চিকিত্সা, স্ট্রেচারে বহন করে নেওয়া প্রভৃতি কাজে সহায়তা করেন তারা। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্তব্যরত ফাইটাররা ভলান্টিয়ারদের লাশ শনাক্তকরণের কাজ দেন। আহসান হাবীব প্রায় ১০-১২টি লাশ শনাক্তকরণ করেন এবং ৪০-৫০টি লাশ তারা ভোর রাত পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্সে ওঠাতে সহযোগিতা করেন।

সেই মর্মান্তিক মৃত্যুদৃশ্য আর পোড়া গন্ধ তাদের অসম্ভব পীড়া দিচ্ছিল। ক্লান্ত দেহে ভোরে দুজন ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। ততক্ষণে আগুন ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে, কিন্তু ক্রমে উত্সুক জনতার ভিড় বাড়তে শুরু করে। জবির কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একুশে ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্বপালনকারী কয়েকজন রোভার রাতে জবি রোভার ডেনে ছিলেন। জবি রোভার-ইন-কাউন্সিলের সভাপতি মো. শেখ সাদ আল জাবের শুভসহ তিন জন রোভার পরবর্তী সময় ঘটনাস্থলে শৃঙ্খলারক্ষার দায়িত্ব পালন করেন। দুপুরের দিকে সেখানকার পরিবেশ মোটামুটি স্বাভাবিক হয় এবং অন্যান্য রোভার স্ব-স্ব গন্তব্যে চলে যান। বাংলাদেশ স্কাউটসের সমাজসেবা ও স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক মো. গোলাম মোস্তাফা আবার কাওছারকে মুঠোফোনে জানান, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ও বার্ন ইউনিটে অবস্থানরত আহত রোগী ও স্বজনহারা মানুষদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কাওছারসহ ১৫ জন দায়িত্বরত ছিলেন, এর মধ্যে তাদের দায়িত্বপালন সম্পন্ন হওয়ায় তাদের নিয়ে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসেন। যেহেতু এরা সবাই ক্লান্ত ছিলেন, সেহেতু তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জবির অন্য রোভারদের এগিয়ে আসার নিমিত্তে স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাস দেওয়ার ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে প্রায় ১৮-২০ জন রোভার সাড়া দেন এবং স্কাউট ইউনিফর্মে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। রোভার ওয়াহেদ সাজ্জাদ, হাসান আলী, সুমনা, রিতু, মুমো, মিম, আলামিন, মুন্না, বিলাল, আলমগীর, হিরক, জুথী, নবাব, শফিকুল, মিলন, আলিফ, সিরজুল, ইব্রাহিম, তোহা সনিয়া, স্বর্ণালী প্রমুখ পরবর্তীতে সন্ধ্যা পর্যন্ত চকবাজারের উত্সুক জনতার ভিড় সামলাতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেন।

উল্লেখ্য, দেশের যেকোনো দুর্যোগে সবার আগে এগিয়ে আসে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরুণেরা। নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করে যান দুর্ঘটনায় আক্রান্তদের সেবা প্রাদানে। ‘চকবাজার ট্র্যাজেডি’ এক ভয়াবহ বিভীষিকার নাম, যা কেড়ে নিয়েছে প্রায় ৬৭টি তাজা প্রাণ। চকবাজারের বাতাসে লাশের গন্ধ ভারী হয়ে বিঁধেছে দেশের সর্বস্তরের মানুষের হূদয়ে।


The brave Volunteer beside the affected people in the Chawkbazar tragedy

No comments:

Post a Comment